উপজেলা/থানা রিসোর্স সেন্টার (ইউআরসি) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ ও একাডেমিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষকদের চাকুরিকালীন পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে উপজেলা/থানা ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ইউআরসি এক নতুন অবকাঠামোগত সংযোজন যা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কারিগরি ও পেশাগত প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে সমধিক পরিচিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপজেলা/থানার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইউআরসি স্থাপিত হয়েছে। কিছুক্ষেত্রে বিশেষ/ যুক্তিসংগত কারণে মডেল স্কুলে ইউআরসি ভবন নির্মাণের অসুবিধা থাকায় উপজেলার নিকটবর্তী অন্য একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইউআরসি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষার গুণগতমান-উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রথম প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (১৯৯৭-২০০৪)-এর আওতায় ‘আইডিয়াল’ও ‘নরওয়ে সাহায্যপুষ্ট প্রাথমিক শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়ন’শীর্ষক প্রকল্প দুটির অর্থায়নে দেশের ৪৮১টি থানা/উপজেলায় ইউআরসি স্থাপিত হয়। দ্বিতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (২০০৪-২০১১) এর শুরুতে ইউআরসি’র জনবল রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত হয় এবং কর্মসূচির আওতায় ইউআরসি সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে ইন-সার্ভিস প্রশিক্ষণ প্রদানসহ একাডেমিক তত্ত্বাবধানিক সহায়তা প্রদান করেছে। পরবর্তীতে তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (২০১১-২০১৬)-এর শুরুতেই অবশিষ্ট ২৪টি থানা/উপজেলায় ইউআরসি কার্যক্রম সচল করা হয় এবং বর্তমানে ৫০৫টি উপজেলা/থানায় ইউআরসির কার্যক্রম বিস্তৃত। মূলত যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও দৈনন্দিন শিখন-শেখানো কার্যক্রমের উৎকর্ষসাধনই ইউআরসি প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য। ফলতঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে শিখন-শেখানো কার্যক্রমের গুণগতমান বৃদ্ধিকরণ, বিভন্ন ধরনের শিখন-শেখানো উপকরণ ও প্রশিক্ষণকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে।
পিটিআই-কেন্দ্রিক সি-ইন-এড সমাপ্তির পর প্রাথমিক শিক্ষকদের স্থানীয় পর্যায়ে আর কোন প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ ছিল না। অথচ শিক্ষণ কাজ একটি জীবনব্যাপী সাধনা ও অনুশীলনের কাজ। শিক্ষকদের এ অব্যাহত প্রশিক্ষণ-সুযোগ সৃষ্টির জন্য ইউআরসি স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য বেসিক-ইন-সার্ভিস, বিষয়ভিত্তিক (বাংলা, গণিত, ইংরেজি, পরিবেশ পরিচিতি সমাজ ও পরিবেশ পরিচিতি বিজ্ঞান), উপকরণ উন্নয়ন, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, শ্রেণিকক্ষে মানোন্নয়ন, আইসিটি ইন এডুকেশন, সুস্বাস্থ্যে শিক্ষা, শিখবে প্রতিটি শিশু বিষয়ক প্রশিক্ষণ; প্রধান শিক্ষকদের জন্য বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা ও একাডেমিক সুপারভিশন, একীভূত শিক্ষা; এবং বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি সদস্যদের জন্য প্রশিক্ষণ আয়োজন ও পরিচালনা করে আসছে।